রাণীশংকৈলে সংবাদ প্রকাশে তালাশ বিডি’র সংবাদকর্মীকে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
প্রকাশের সময় : ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাণীশংকৈলে সংবাদ প্রকাশে তালাশ বিডি’র সংবাদকর্মীকে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া ভূতপাড়া গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে হাতেনাতে ধরা পড়া যুবক মোঃ হানিফ (২৭) এর বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়াবহ অপরাধের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নারীদের উত্যক্ত করা-সবকিছুতেই হানিফের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। সর্বশেষ প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়লেও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আবারও টাকা দিয়ে পার পেয়ে যান তিনি।

এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তালাশ বিডি’র রাণীশংকৈল প্রতিনিধি মোঃ আকতারুল ইসলাম আক্তার একাধিকবার হত্যার হুমকি দেন। উক্ত আসামি একাধিকবার আমাকে সরাসরি প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট/আইডি ও বিভিন্ন ভুয়া অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে ভয়ভীতি ও অপমানজনক মন্তব্য করছে। এর ফলে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।” বর্তমানে তিনি ও তার পরিবার গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ২১ সেপ্টেম্বর রাণীশংকৈল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১০৫০) করেছেন।

রাতের আঁধারে লজ্জাজনক কাণ্ড: ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার গভীর রাতে ভরনিয়া ভূতপাড়া গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। স্থানীয় সূত্র জানায়, হানিফ প্রায় প্রতিরাতে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এলাকাবাসী ফাঁদ পাতে। রাত দেড়টার দিকে হানিফ ঘরে প্রবেশ করলে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে ক্ষুব্ধ জনতা।

১ নম্বর ধর্মগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন-“আমরা তাকে অবৈধ অবস্থায় ধরি। পরে স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” কিন্তু চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সালিশ-বিচারের সময় উপস্থিত ছিলেন না।

অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর বিএনপির স্থানীয় নেতা ও ধর্মগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ঘটনাস্থলে গিয়ে হানিফকে উদ্ধার করেন এবং সালিশে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ‘মীমাংসা’ করে দেন।

টাকা দিয়ে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন, এলাকাবাসীর অভিযোগ, হানিফ এর আগেও নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই টাকা অথবা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে আসেন। তাদের ভাষায়- এলাকায় যুব সমাজকে মাদকের দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক পরিচয় ভাঙিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছেন একাধিকবার। নারীদের উত্যক্ত করা ও পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানো তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মসজিদ-মাদরাসার জমি দখল ও মারামারিতেও তার নাম এসেছে আগে। এমনকি অনেকে জানিয়েছেন, হানিফের বিরুদ্ধে থানায় মৌখিকভাবে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রমাণের অভাবে কিংবা প্রভাবশালীদের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংবাদকর্মীকে হত্যার হুমকি: ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তালাশ বিডি’র সাংবাদিক আকতারুল ইসলাম আক্তার। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পরপরই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা ফোন করে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

সংবাদকর্মী আকতারুল ইসলাম আক্তার বলেন- “আমি কেবল সত্য তুলে ধরেছি। এর পর থেকেই হুমকি আসছে। স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে, বেশি নড়াচড়া করলে মেরে ফেলা হবে। আমি এবং আমার পরিবার এখন ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।”

তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চান।

থানায় জিডি, পুলিশের আশ্বাস,২১ সেপ্টেম্বর তিনি রাণীশংকৈল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১০৫০) করেন।

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন- “তালাশ বিডি’র সাংবাদিক হত্যার হুমকি পাওয়ার বিষয়ে জিডি হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। দোষীদের শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা বলেন, গ্রামবাসীর দাবি, হানিফের মতো অপরাধীরা প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। টাকা দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে। “প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ধরা পড়ার মতো লজ্জাজনক ঘটনায়ও যখন টাকা দিয়ে মীমাংসা হয়, তখন অপরাধীরা আরো সাহসী হয়ে ওঠে। এখন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি প্রমাণ করছে, তারা সত্যকে ভয় পায়।”

প্রবাসীর পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক সমাজ মনে করছে-যদি এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও কঠোর শাস্তি না হয়, তবে সমাজে অনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বিস্তার লাভ করবে এবং সত্য সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন।

চলবে…………….